বয়স অল্পই হবে। বেশি হলে ভিড়ের মিনি বাসে চড়ে অত সহজে সিট দখল করতে পারত না।
আমার ঠিক পাশেই। ঘুরে তাকিয়ে দেখার প্রবল ইচ্ছে। পারছিনা। সরাসরি পাশ ফিরে কোনও অচেনা মেয়ের দিকে তাকানো কি সভ্যতার কাজ? কেউ কেউ পারে। আমি পারি না।
চোরা দৃষ্টিতে মেয়েদের দিকে চাইলে তারা কি খুশি হয়? হয়তো হয়। কে তাকাচ্ছে তার উপর নির্ভর করে বোধহয়। নিঃসন্দেহে আমি সে লোকটা নই।
জানালার ধারে বসে আছি। সূর্য পশ্চিমে, বিকেল চারটের আভা। পশ্চিমের সূর্যের আলোতে তার মুখও নিশ্চয়ই রাঙিয়ে উঠেছে।
সংযম হারিয়ে আড়চোখে টুক করে তাকালাম। সে উলটো দিকে চেয়ে। শুধু মাথার ঘন কাল চুলের বিনুনি দেখতে পেলাম। পরনে দামী শাড়ি। নীল আকাশে সাদা মেঘ। ঢাকাই? হবেও বা। মিনি বাসে দামী ঢাকাই শাড়ি? নিজের বুদ্ধির কথা ভেবে একটু হতাশই হলাম।
মুখটা সামান্য এদিকে ঘোরালেই আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যেতাম। কিন্তু সে নিবিষ্ট মনে অন্য দিকে কী দেখতে মগ্ন কে জানে?
হয়তো সুন্দরী। হয়তো চোখে মুখে বুদ্ধির ছাপ। হয়তো এর খোঁজেই কেটেছে এতকাল। অজস্র প্রশ্ন। অচেনা মেয়ে, চেনা প্রশ্ন।
বাস এক্সাইড মোড় পার হয়ে পৌঁছে গেল গুরুসদয় রোডে। ভিড় কমে আসছে, নতুন যাত্রী বেশি উঠছে না। এখনই দেখার সুযোগ। মনে হল সকলেই ওকে দেখছে, কেবল আমি বঞ্চিত।
এই থামান!
কর্কশ এক কণ্ঠস্বর। হাঁড়িচাঁচার মত। আমার পাশেই। স্টপেজে না থেমেই বাসটা চলে যাচ্ছিল। জোরে ব্রেক কষে থেমে গেল। আমি প্রায় হুমড়ি খেয়ে উলটে পড়ছিলাম। কণ্ঠস্বর শুনে? নাকি বাসের ব্রেকে টাল সামলাতে না পেরে? বোধহয় দুটোই।
মেয়েটি আরও কী সব বলল কন্ডাক্টরকে। শাসনের ভঙ্গিতে। বচসা হল।
আগে বলবেন তো!
আগেই তো বলেছিলাম, আপনারা কানে শোনেন কিছু? আবার হাঁড়িচাঁচা। আর তাকাতে অসুবিধা নেই। কিন্তু সে তখনও আমার দিকে পিছন ফিরে।
বাস থেকে নেমে গেল। একটু চেষ্টা করলে এবার তাকে দেখতে পারতাম ঠিকই। দেখলাম না।
হাঁড়িচাঁচাকে।
পরনে দামী শাড়ি।
হয়তো সুন্দরী।