A KALEIDOSCOPE WORLD

অনুপমা – ফোনুগল্প (অণুগল্প ২)

-হ্যালো …
-হ্যাঁ, বলুন …
-স্যর আপনি তো আকোয়া গার্ডের জিনিস ব্যবহার করেন।
কণ্ঠস্বর বলছে মেয়েটার বয়স খুব বেশি হলে পঁচিশ। কেমন দেখতে কে জানে।ছিপছিপে লম্বা গড়ন? নাকি বেঁটে মোটা, গোলগাল।
-হ্যাঁ করি।
-আপনি কি অমুক তমুকগুলো ব্যবহার করছেন?
-ঠিক বুঝতে পারলাম না। আরেকবার বলবেন? কী জিনিসের কথা বলছেন? আমি আপনাদের ভ্যাক্যুওম ক্লিনার ব্যবহার করি, ওয়াটার পিউরিফায়ার ব্যবহার করি, একটা এয়ার পিউরিফায়ার না কী যেন কিনিয়েছিলেন, সেটাও ব্যবহার করতাম। এখন অনেকদিন করিনি। তাই আর তো কিছু কেনার নেই।
-না, না। ওগুলোর কথা বলছি না।
তার গলায় এবার স্পষ্ট উৎকণ্ঠা।
-আমি অন্য জিনিসের কথা বলছি।
-কী জিনিস?
-সিসি-টিভি আছে কি আপনার? একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে গিয়ে আপনাকে ডেমন্সট্রেশন দিয়ে আসতে পারি।
-না, না।
এবার উৎকণ্ঠা আমার কণ্ঠস্বরে।
-আমি সিসি-টিভি দিয়ে কাকে দেখব? আমার মিসেস্‌ টিভি সিরিয়াল দেখেন, আর আমি অন্য ঘরে বসে দুশ্চিন্তা করি। আমাদের দুজনের কেউই কাউকে দেখতে পাই না। মানে চাই না। সিসি-টিভি দিয়ে নতুন কী দেখব?
-স্যর সিকিওরিটির জন্য এগুলো কাজে লাগে। আপনি একটা দিন দিলে আমাদের ইঞ্জিনিয়র গিয়ে দেখিয়ে দেবে।
পঁচিশ বছরের মেয়েটা নিজে আসবে না। কালো ব্যাগ কাঁধে ইঞ্জিনিয়র পাঠাবে।
-ও, আপনি নিজে আসবেন না? তাহলে তো …
আর কিছু বললাম না।
-না স্যর, ইঞ্জিনিয়র যাবে। সব বুঝিয়ে দেবে। এটা রাখা খুব জরুরি। আপনি একবার ট্রাই করে দেখুন।
-আচ্ছা আপনি কেন বুঝছেন না যে আমার কাউকে দেখার নেই। আর এমন কোনও লোক নেই যে আমাকে দেখতে চায়! তবে হ্যাঁ, একটা ইঁদুর আমার বাড়িতে কদিন ধরে বাসা বেঁধেছে। হয়তো কাচ্চা বাচ্চাও হয়েছে প্রচুর। ঐ ইঁদুরটাকে কি সিসি-টিভি দিয়ে খুঁজে পাব?
-হ্যাঁ স্যর পাবেন। ইঁদুর, আরশোলা, টিকটিকি সব ধরা পড়বে।
মেয়েটির গলায় উৎসাহ উথলে পড়ছে।
-তারপর?
-কি বললেন স্যর?
-বললাম, তারপর? মানে তারপর কী করব? শোবার ঘরে বসে বসার ঘরের ইঁদুর দেখব? সিসি-টিভি দিয়ে কি ইঁদুর ধরাও যায়? নাকি ইঁদুর দেখলে আপনাদের খবর দিতে হয়?
-স্যর, আপনি একবার ডেমন্সট্রেশনটা দেখুন, তাহলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
-না গো, এখন আমার ঐ জন্তরটার দরকার নেই। দরকার হলে জানাব।
-ও! তাহলে স্যর আমার ফোন নম্বরটা সেভ করে রাখুন। আমাকে ফোন করলে ব্যবস্থা করে দেব। আমার নাম অনুপমা।
-ঠিক আছে, যেদিন দরকার হবে, সেদিন তাই করব। কিন্তু আপনি কি তখনও এই কোম্পানিতেই কাজ করবেন? হয়তো ততদিনে কানপুরে জুতোর দোকানের সেল্‌স গার্ল হয়ে গিয়েছেন।
একটু হাসি। এইটাই শুনতে চাইছিলাম। পঁচিশ বছরের মেয়ের গলার মিষ্টি হাসি। বেঁটে মোটা হলেও, ভারি মিষ্টি।
-না স্যর, আমি এখানেই থাকব। আপনি আমাকে ফোন করলেই সব ব্যবস্থা করে দেব।
এবার আমার হতাশ হাসির পালা। এমন কত ফোন নম্বর সেভ করেছি। নম্বর থেকে যায়, অনুপমারা থাকে না। ঐ পঁচিশ বছর বয়সটা খুব ডেঞ্জারাস। কেটে পড়ে।
-ঠিক আছে। আপনার নম্বর সেভ করে রাখছি। আগে আপনাকে ফোন করব। তারপর আপনাকে না পেলে আকোয়া গার্ডকে ফোন করব।
-হ্যাঁ স্যর, থ্যাঙ্ক্যু।
ইঁদুরটা ফিক ফিক করে হাসছে তো হাসছেই।

%d bloggers like this: