নিবাস অধুনা মোর কাও লুন টং,
জেনে রাখ একটুও দিচ্ছি না রঙ।
কাও লুন টং কোথা? হং কং চেন?
ওখানেই কাও লুন এটুকুই জেন।
এর বেশি আর কিছু কোরো না জিগেস,
কলকাতা থেকে বাপু দূর আছে বেশ।
তাছাড়া নিজেই কি রে চিনি রাস্তা ?
ফেলে দিয়ে গেছে কারা শুধু জানি তা।
এর বেশি লাভ কি বা জানিয়ে তোমারে ?
জানালেও লাগতে কি কোনও উপকারে?
শুধু বলে রাখি মোর পড়শী কারা,
ছাত্র ছাত্রী দিয়ে ভরা এ পাড়া,
কোলাহল করে তারা সবে দিবারাত,
যদিও বুঝি না ভাষা, কিংবা কী জাত।
ছাত্রীরা যথারীতি অতি সুরূপা
মধুর হাস্যে সদা করিছে কৃপা।
ছাত্রগুলোর শুধু মন্দ কপাল
গৃহিনীর তরে মোর বয়ে দেয় মাল।
মাল আসে কোথা থেকে এ কথাও বলি,
হং কং শহরেতে সব অলি গলি,
বাজার বাজার আর কেবল বাজার,
রঙ চঙে ঝলমলে হাজার হাজার।
ফেল কড়ি মাখ তেল নিয়ম হেথায়,
না মানলে দেবে ধরে শীঘ্র বিদায়।
নেই রে পাওয়ার কাট এখানে হঠাৎ,
পশার সাজিয়ে তাই আছে দিন রাত
দোকানীরা, সাথে নিয়ে পাহাড় প্রমাণ,
পণ্য কেনাবে টেনে ধরে নাক কান।
জিনিসে জিনিসে যাবে ঘর দোর ভরে,
জিনিস নেশায় যাবে প্রাণটা বেঘোরে।
রক্ষে এটাই হেথা পর্বত আরও
রয়েছে, চাইলে তুমি পাবে খোঁজ তারও।
নভোতলে শোভে তারা ছায়া সুনিবিড়
বৃক্ষ, গুল্ম, তৃণারণ্যে গভীর।
পাহাড় তেমনই কিছু ল্যান টাও দ্বীপে
হাতছানি দেবে সদা আপন সমীপে।
নং পিং গ্রাম আছে সেখানে চূড়াতে
বৌদ্ধ সংঘারাম শোভে দিনে রাতে।
কাও লুন টং থেকে যেতে যদি চাও,
নং পিং গ্রামে — তবে ট্রেনে চেপে নাও।
মাঝে প্রিন্স এডওয়ার্ড ইস্টিশানে,
নেমে প’ড়, নয় কোথা হারাবে কে জানে।
এখানে বদলে গাড়ি যেও কিং লাই,
নং পিং গাঁয়ে যদি চাও পেতে ঠাঁই।
কিং লাই থেকে তুমি তুং চুং যেও,
পথে পাবে গুহাপথ বলে রাখি এও।
আরও পাবে দু পাশেতে সাগরের জল,
নানাভাষী সহ-যাত্রীর কোলাহল।
তুং চুং স্টেশনের অনতিদূরে,
Cable শকট যায় পাহাড়পুরে,
যেথা আছে নং পিং গ্রামখানি বসি,
কত মাস, কত নিশি, কত না দিবস-ই,
চেয়ে তব পথ — তবু হবেই নাকাল,
থিরুপতি গিয়ে হয় যেমনটা হাল।
কিংবা শিরিডি যদি গিয়ে থাক কভু,
ভীড়েতে চ্যাপ্টা হয়ে সাই বাবা প্রভু
দরশন করে থাক, বুঝবে তাহলে,
নং পিং সহজেতে নাহি যাওয়া চলে।
সাহসে কুলায় যদি প্রচুর তোমার,
মনখানা হয় যদি অতীব গোঁয়ার,
অজগর সাপ সম লাইনটির শেষে,
দু হাতে সময় নিয়ে দাঁড়িও হে এসে।
ইতি উতি চেয়ে থেকে দু তিন প্রহর,
পৌঁছাবে অবশেষে টিকিটের ঘর।
যতনে টিকিট কিনে ফের দেবে লাইন,
Cable গাড়িতে ওঠার এই হোল আইন।
হঠাৎই তাহার পর কাঁচে ঘেরা গাড়ি,
এসে যাবে — লাফ দিয়ে তুমি তাড়াতাড়ি,
বসে পড়ে জানালার একেবারে পাশে,
দেখবে চারিটি দিক আহ্লাদে হাসে।
সবুজ পাহাড় আর ঘন নীলাকাশ,
পাতালেতে সমুদ্র করে উচ্ছ্বাস,
তারি মাঝে দু-চারটে মেঘ এসে ভেসে,
জানালা আঁকড়ে থেকে চেয়ে অনিমেষে,
টা টা বলে হয়ে যায় কোথায় উধাও,
যতই মর না খুঁজে পাবে না কোথাও।
মেঘ নিয়ে উদ্বেগ করে কী বা লাভ?
এমনই জানবে সদা তাদের স্বভাব।
তার চেয়ে শূন্যেতে ঝোলা গাড়ি থেকে,
পাহাড়ি পথেরা দেখ গেছে এঁকেবেঁকে,
ফোয়ারা ছুটিয়ে নীচে নৌকার সারি,
সফেন সাগরে দেয় সুদূরের পারি।
বহু দূরে লাল নীল ছোটে গাড়ি বাস,
ক্রমে পাওয়া যায় না কো তাদেরও আভাস।
তারপরে পাহাড়ের চূড়াটিতে এসে,
ঝোলাগাড়ি থেকে তুমি নেমে অবশেষে,
পায়ের তলাতে জমি ফিরে পাবে যবে,
ভ্রম হবে আর কিছু ছিল না এ ভবে।
ছিল এ পাহাড় শুধু মহাকাশ আর,
বাকি যাহা নাই কোনও ঠিকানা তাহার।
পাহাড়িয়া পথ ধরে এইবারে যাও,
যেদিকেতে পায় শোভা নং পিং গাঁও।
সাথে যাবে শত চীনা, হাজার জাপানী,
দামড়া সাহেব মেমও কত না জানি।
দোকান বাজার হাট রেস্তোঁরা আর,
বাজিকর বসে ঝুলি ভরা সম্ভার,
এইখানেতেই তুমি পাবে পুনরায়,
নাচ গান করে নিও যত প্রাণ চায়।
এরপরে গ্রামটির পথ ধরে আরও,
দু-শ গজ হেঁটে যেও যদি তুমি পারো।
বৌদ্ধ সংঘারাম সেথা ঝলমল,
সদ্য প্রস্ফুটিত যেন শতদল।
জ্বলে তার গায়ে নীল, জ্বলে সোনা, লাল,
পাশে তার বুদ্ধ মুরতি সুবিশাল।

নিকষ কৃষ্ণ তাঁর অঙ্গখানি,
দক্ষিণ হাতে আঁকা আশীর্বাণী।
মায়াময় নয়নেতে নির্মল স্নেহ,
অধর ওষ্ঠে হাসি শান্তির গেহ।
অবাক চোখেতে লোকে চেয়ে তার পানে,
কী বা খোঁজে জানে কেউ কি বা তার মানে ?
এভাবে তাকায়ে তব সারাদিন যাবে,
ভাববে হয়তো তুমি কিসের অভাবে,
জড়িয়ে কিসের ফাঁদে কোন মায়াজালে,
মানুষে কাঁদছে সদা ইহ পরকালে ?
তারপর শোনা যাবে ঘণ্টির ধ্বনি,
তন্ময় ভাবখানা কাটবে তখনি।
এইবারে ফের তুমি লাইনেতে ফেঁসে,
দিনগত পাপ ক্ষয়ে পুনরায় ভেসে,
শূন্যেতে ঝুলে থেকে আরও ক্ষণকাল,
মর্ত্যপুরীতে ফিরে ফের ঠুকে তাল,
পণ্যের পাহাড়েতে সেজে তুমি সং,
ট্রেনে চেপে ফিরে যাবে কাও লুন টং।
[রচনা – হং কং, ২৪ এপ্রিল ২০০৭]