© ছবি – অমল সান্যাল
সুয্যি সেদিন যাচ্ছে ডুবে, চাঁদটি উঁকি মারছে পুবে,
ফুটছে তারা ... এমনি সময়, আসল কানে, বুজরুকি নয়,
টিকটিকি আর আরশোলাতে বাক্যালাপ।
মুণ্ডু মাথা নেই কোনও তার, বাজছে কানে তবুও বেকার,
সুর ভরা সেই অচিন বেসুর, সকাল বিকেল রাত্রি দুপুর,
পণ্ড করে আর যত মোর কাজকলাপ।
***
টিকটিকি কয়, "আরশোলা রে, কোথায় আছিস ভাই?
চল দুটিতে মাতিয়ে সভা গিটকিরি গান গাই।
বাসায় আমার আজ ডেকেছি আত্মীয়দের ভোজ
থাকলে গানা, জমবে খানা, হয় কি এমন রোজ?"
হুড়মুড়িয়ে গর্তে ঢুকে, আরশোলাতে শুকনো মুখে
বলল, "দাদা, লজ্জা দিলে বড়!
গাই কেমনে প্রাণটি খুলে, বিস্তর কাজ রয়েছে ঝুলে,
এমন দিনে অন্য কারেও ধর।"
"ধরব কারে? গঙ্গাফড়িঙ্, উচ্চিংড়ের ছা-ও
গাইবে বলে ভাঁওতা দিয়ে ভোর থেকে উধাও।
তুই বাছা মোর শেষ ভরসা, দে বাড়িয়ে হাত,
নইলে ফিরি কোন মুখে বল? থাকবে না কো জাত।"
"হায় রে দাদা, সবাই ফাঁকি দিচ্ছে বসে, কেবল বাকি
আমিই - তোমায় তরিয়ে দিতে ভবে?
থাক তবে কাজ রাখব আগে, সুনাম তোমার রাগ বেরাগে,
গর্ত থেকেই গান শুনিয়ে সবে।"
লেজখানিতে ঢেউ তুলিয়ে, টিকটিকি সে কয়,
"মঞ্চে বসেই গা' না কেন? কিসের এত ভয়?
ঘুটঘুটে ঐ গর্ত ছেড়ে এক্ষুণি তুই চল,
রোশনি ভরা ভোজবাড়িতে জমছে দলে দল।"
"সাধ করে কি গর্তে ভায়া? আকাশ ঘিরে বাদল ছায়া,
ভিজলে ডানা ধরবে নিউমোনিয়া -
প্রপঞ্চময় মর্ত্যপুরে," আরশোলা কয় হতাস সুরে,
“দেখবেটা কে? ভাবলে কাঁপে হিয়া!"
"বাদল ছায়া কোথায় পেলি? নীল গগনে চাঁদ
জোছ্না মেখে, রয়েছে পেতে ঘুম-তাড়ানি ফাঁদ।
অন্ধ? না তোর পড়ল ছানি? ঠিক কী আছে তার?
চেন্নাই চল, দেখিয়ে আনি মাদ্রাজি ডাক্তার।"
" 'চেন্নাই সে কোন চুলো গো?' সহস্র মোর বউ, মেয়ে, পো,
উলটে শুয়ে চিল্লাবে সব 'হায় রে হায়!'
সামাল দেবে তাদের ক্যাটা? আরশোলাদের হরেক ল্যাঠা
চিৎ হলে ফের উপুর করা বেজায় দায়।"
"হেই বাবা রে! সত্যি? নাকি দিস মোরে ভড়কি?
হাজারটা তোর লড়কা, বিবি? সুন্দরী লড়কি?
না, না, রে ভাই, এদের ছেড়ে যাস নে কভু আর,
আমিও নিলাম তোর গুষ্টির চৌকিদারির ভার!"
"রাম, রাম, রাম, ছি, ছি আরে! টিকটিকিতে আরশোলারে
পাহারা দিলে হাসবে দেশের লোক!
হাসবে মাছি, পিঁপড়ে, পোকা, বলবে ‘দেখ দিচ্ছে ধোঁকা!
ভূতের ব্যাটাও আওড়াতে চায় শ্লোক!' "
"কী বললি তুই? ভূতের ব্যাটা? করছি আমি ছল?
ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলি এবার, চড়ল কোলেস্ট্রল।
হৃদের রুগী, কতই ভুগি – সয় না এত আর,
সব কটাকে আস্ত গিলে করব প্রতিকার!"
***
তারপরে ছাই কী যে হল, থাকল কে যে, কে যে মোল?
ধাঁই-ধপাধপ্, ধড়মড়মড়, শব্দ শুনে বুক ধড়ফড়,
আসল পুলিশ ঘুরিয়ে হাতের ডাণ্ডা,
বাজল বাঁশি, ফাটল বোমা, লড়ল উকিল মকদ্দমা,
জমল কে সব, তুলল কী রব, তারই মাঝে আমার আজব
গপ্পোখানা জুড়িয়ে কখন ঠাণ্ডা!
প্রথম রচনা ২০০১।
শেষ পরিমার্জনা ২০১১।
কলকাতা।