A KALEIDOSCOPE WORLD

অবৈধ — অণুগল্প

অরুণিমা — ফোন করেছিলাম সেদিন, ধরলে না … ওয়াট্‌স অ্যাপ মেসেজেরও জবাব এল না।

পলাশ – ফোন? শুনতে পাই নি তো? ওয়াট্‌স অ্যাপটাও বোধহয় কাজ করছিল না। কী জানি।

অরুণিমা — ও আধ ঘণ্টার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। সেই সুযোগে ফোন করলাম … তুমি ধরলে না। আজও একটু পরেই ফিরবে।

পলাশ – আমাকে তুমি সারা জীবনে আধ ঘণ্টার বেশি সময় দিলে না। আচ্ছা উনি আমাকে এত অপছন্দ করেন কেন? আমি তো ওনার সঙ্গে শত্রুতা করি নি। করার ইচ্ছেও নেই। একেবারেই নেই। কেমন করে শত্রুতা করা যায় তাও বুঝতে পারি না।  

অরুণিমা — হ্যাঁ … জানি … কিন্তু রেগে যায়।

পলাশ – কেন? কী বলেন?

অরুণিমা — ঐইই … অচেনা পুরুষটা তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করে কেন? লোকটার মতলব খারাপ।

পলাশ — বললেই পার … অচেনা পুরুষ না, চেনা বুড়ো … কলেজে চিনতাম।

অরুণিমা — বিশ্বাস করে না।

পলাশ — সত্যি কথাটা বলে দাও। তোমাকে লাইন দিয়েছিলাম … তুমি ভাগিয়ে দিয়েছিলে … খুশি হবেন।

অরুণিমা — রোজ আমার ফোন খুলে দেখে তোমার ফোন এসেছিল কীনা।

পলাশ — বাপরে …

অরুণিমা — হি হি হি …

পলাশ — তোমার সঙ্গে যোগাযোগ না করলেই পারতাম। মানুষ ভুল করে ফেলে … জয়ন্ত তোমার ঠিকানাটা দিল, আমিও আমার নতুন বইখানা তোমাকে পাঠিয়ে দিলাম। ফোন কিন্তু করি নি।

অরুণিমা — ওয়াট্‌স অ্যাপ তো করেছিলে। এমন কথাও বলেছিলে যে আমাকে কোনোদিন ভুলতে পার নি।

পলাশ – বলেছিলাম বটে। কথাটা সত্যি।

অরুণিমা – সত্যি কথা? আমি তো এখানেই ছিলাম। যোগাযোগ কর নি কেন?

পলাশ — সে কী? তুমি তো আমাকে ফুটিয়ে দিয়েছিলে। সারা জীবনে একদিনই কথা বলেছ সামনাসামনি। মানে পাশাপাশি। তারপর আমি কলেজের গেটে ভিখিরির মত দাঁড়িয়ে থাকতাম, আর তুমি তোমার বান্ধবী পরিবেষ্টিত হয়ে পাত্তা না দিয়ে চলে যেতে। ঐ মহিলা ব্যূহ ভেদ করে তোমার সঙ্গে কথা বলা অসম্ভব করে দিয়েছিলে।

অরুণিমা – নইলে কী করতাম? দৌড়ে গিয়ে তোমায় … যাক গিয়ে … এবার বোধহয় ফোন রাখতে হবে। ওর ফেরার সময় হয়েছে …

পলাশ — তুমি আমার দিকে ফিরেও তাকাও নি কখনও। সঙ্গত কারণেই নিশ্চয়ই। যতদিনে বিদেশ থেকে ফিরলাম, নিশ্চয়ই বিয়ে করে সংসার করছ। ছেলে মেয়েও উপহার দিয়েছ। এদিকে উনি আমি পরস্পরকে চোখেও দেখি নি। তাই রাগটা রহস্যময়।  

অরুণিমা — হয়তো তাই। অত শত বিশ্লেষণ করে না।  

পলাশ – মিছিমিছি ওনার বিরক্তির কারণ হয়ে গেলাম। আচ্ছা, তুমিই বা আমাকে ফোন কর কেন? আমাদের কি কোনো সম্পর্ক হওয়া আর সম্ভব? অবশ্য শব্দ তরঙ্গের আদান প্রদানটাও একটা সম্পর্ক হতে পারে।  

অরুণিমা – হবেও বা …  

পলাশ – আর তারপর যদি শব্দের ছোঁয়াটা অন্য কোনো ছোঁয়ায় পরিণত হয়? তাও কি সম্ভব?  তুমি থাক নৈহাটিতে, আমি উলুবেড়িয়ায়। হাতে ছোঁয়া তো কোনো ভাবেই সম্ভব না। শব্দ দিয়ে যদি তোমায় ছুঁয়ে ফেলি … হয়তো তাই ভাবেন …

অরুণিমা — কী রকম?

পলাশ — মন ছোঁয়া যায় না? তার সঙ্গে দেহের তো সম্পর্কই নেই। উনি বুদ্ধিমান লোক সন্দেহ নেই। ইংরেজিতে sensitive …

অরুণিমা – বলছ?  

পলাশ – প্রেমের জন্য দেহের চেয়ে মনের প্রয়োজন বেশি …  

অরুণিমা – তাই বোধহয় …

পলাশ – তাই বোধহয়? তার মানে তুমি কি এতকাল পরে আমায় ভালবাসতে পারবে? যখন তোমার সঙ্গে শারীরিক নৈকট্য থাকা সম্ভব ছিল, তখন কিন্তু ভালবাস নি। এখন তো কেবল মনটাই বাকি আছে।

অরুণিমা – তুমিই কি ভালবেসেছিলে? একদিন আধ ঘণ্টা কথা বলে কি ভালবাসা যায়? বললাম তো, আমি তো ছিলাম, তুমি কী করছিলে?

পলাশ – আমিও বললাম তো, তোমার তাড়া খাচ্ছিলাম …

অরুণিমা — এবার ছাড়ি …

পলাশ — আমার বয়েস আশি – তোমারও কাছাকাছি। তোমাকে দেখে চিনতেও পারব না। ওনাকে এটা বলেছ তো?

অরুণিমা — বেল বেজেছে। ছাড়লাম।

পলাশ — দাঁড়াও, দাঁড়াও — তুমি আমাকে আদৌ ফোন কর কেন? সেটা তো বলবে?

অরুণিমা – ছাড়লাম।  

ফোনটা এখন বোবা। পঞ্চাশ বছর আগের শরতের রাঙা একটা দুপুর পলাশের মনে পড়ে। ছবিটা পুরোন হল না। সে চোখ বুজে শোনে কে যেন ফিসফিস করে বলছে — শরীর? শরীর? তোমার মন নাই কুসুম?  

%d bloggers like this: